May 2, 2019

ঘূর্ণিঝড় ফণীর সর্বশেষ

০৩/০৫/১৯/০৯;০৪
bdnews24

ঘণ্টায় ২০০ কিলোমিটারের বেশি গতির বাতাসের শক্তি নিয়ে ভারতের ওড়িশা উপকূলের কাছাকাছি পৌঁছে গেছে অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় ফণী।

আবহাওয়ার বিশেষ বুলেটিন এবং আমাদের সংবাদকর্মীদের পাঠানো তথ্য থেকে এক নজরের জেনে নিন ঘূর্ণিঝড়ের সর্বশেষ খবর।
# অবস্থান: ভারতীয় আবহাওয়া দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, রাত ১১টায় ফণী ওড়িশার পুরী থেকে ২৪০ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণপশ্চিমে, অন্ধ্রের বিশাখাপত্তম থেকে ১৭০ কিলোমিটার পূর্ব-দক্ষিণপূর্ব এবং পশ্চিমবঙ্গের দীঘা থেকে ৫৪০ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণপশ্চিমে অবস্থান করছিল।
আর বাংলাদেশের আবহাওয়া অধিদ্প্তরের তথ্য অনুযায়ী, বৃহস্পতিবার রাত ৯টায় ঘূর্ণিঝড় ফণী চট্টগ্রাম বন্দর থেকে ৯০৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে, কক্সবাজার থেকে ৮৭৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে, মোংলা সমুদ্র বন্দর থেকে ৭২৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে এবং পায়রা সমুদ্র বন্দর থেকে ৭৫০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থান করছিল।
# শক্তি: ভারতের আবহাওয়া অফিস বলছে, ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৭৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ২১০ কিলোমিটার, যা দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়ার আকারে ২৪০ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে।
# আঘাত হানার সম্ভাব্য সময়: শুক্রবার সকাল ৯টার দিকে গোপালপুর আর চাঁদবালির মাঝামাঝি এলাকা দিয়ে ওড়িশা উপকূলে আঘাত হানতে পারে ফণী। তখন বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ হতে পারে ঘণ্টায় ১৭০ কিলোমিটার, যা দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়ার আকারে ২০০ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পেতে পারে।
প্রায় ৩০০ কিলোমিটার ব্যাসের এই ঘূর্ণিঝড় পুরোপুরি স্থলভাগে উঠে আসার প্রক্রিয়া চলবে কয়েক ঘণ্টা। এরপর মুষলধারে বৃষ্টি ঝরাতে ঝরাতে এবং ঘূর্ণি বাতাসের তাণ্ডব চালাতে চালাতে ফণী অগ্রসর হতে পারে উত্তর-উত্তরপূর্ব দিকে।
# কখন কীভাবে বাংলাদেশে: স্থলভাগে এসে ধীরে ধীরে দুর্বল হতে থাকবে এ ঘূর্ণিঝড়। পশ্চিমবঙ্গে প্রবেশের সময় বাতাসের গতি থাকতে পারে ঘণ্টায় ৯০ থেকে ১০০ কিলোমিটার। 
এই পথ ঠিক থাকলে ঘণ্টায় ৬০ থেকে ৭০ কিলোমিটার বাতাসের শক্তি নিয়ে ঘূর্ণিঝড় ফণী শনিবার সন্ধ্যায় বাংলাদেশে প্রবেশ করতে পারে বলে ভারতীয় আবহাওয়াবিদদের ধারণা।
তবে বাংলাদেশের আবহাওয়া অধিদপ্তরের পূর্বাভাস বলছে, ঘূর্ণিঝড় ফণী বাংলাদেশের স্থলভাগ পার হওয়ার সময় ঘণ্টায় ১০০ থেকে ১২০ কিলোমিটার বেগে দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে।
# সংকেত: ঘূর্ণিঝড় ফণী এগিয়ে আসায় মোংলা ও পায়রা সমুদ্র বন্দরকে ৭ নম্বর বিপদ সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। ভোলা, বরগুনা, পটুয়াখালী, বরিশাল, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, বাগেরহাট, খুলনা, সাতক্ষীরা জেলা এবং সংলগ্ন দ্বীপ ও চরগুলো ৭ নম্বর বিপদ সংকেতের আওতায় থাকবে।
চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দরকে ৬ নম্বর বিপদ সংকেত দেখাতে বলেছে আবহাওয়া অফিস। চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, ফেনী, চাঁদপুর এবং নিকটবর্তী দ্বীপ ও চরগুলো ৬ নম্বর বিপদ সংকেতের আওতায় থাকবে।
আর কক্সবাজার সমুদ্র বন্দরকে আগের মতই ৪ নম্বর স্থানীয় হুঁশিয়ারি সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। বুধবার দুপুরে দেশের সবগুলো বন্দরেই ৪ নম্বর সংকেত জারি করা হয়েছিল।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের পরিচালক শামসুদ্দিন আহমেদ বলেছেন,বাংলাদেশে মহাবিপদ সংকেত দেওয়ার সময় এখনও হয়নি। শুক্রবার সকাল পর্যন্ত ঘূর্ণিঝড়ের মতিগতি পর্যবেক্ষণ করে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

সতর্কতা:
>> ফণীর প্রভাবে ভারতের অন্ধ্র ও ওড়িশা উপকূলে বৃষ্টি হচ্ছে বৃহস্পতিবার থেকেই উপকূল অতিক্রম করার সময় দমকা বা ঝড়ো হাওয়ার সঙ্গে চলতে পারে অতি ভারি বর্ষণ।
>> ঝড়ের অগ্রবর্তী অংশের প্রভাব বাংলাদেশের খুলনা অঞ্চলে দেখা দিতে পারে শুক্রবার সকাল থেকেই। জোরালো বাতাসের সঙ্গে থাকতে পারে বৃষ্টি।  
>> দুই দিন পর অমাবস্যা থাকায় ঘূর্ণিঝড় উপকূল অতিক্রম করার সময় উপকূলীয় জেলা চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, ফেনী, চাঁদপুর, বরগুনা, ভোলা, পটুয়াখালী, বরিশাল, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, বাগেরহাট, খুলনা, সাতক্ষীরা এবং অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরাঞ্চল স্বাভাবিকের চেয়ে ৪ থেকে ৫ ফুট বেশি উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হতে পারে।
>> বাংলাদেশের আবহাওয়া অফিস বলছে, শুক্রবার সন্ধ্যা ৬টা নাগাদ পুরো বাংলাদেশ ঘূর্ণিঝড়ের আওতায় থাকবে। উচ্চগতির বাতাস ও দমকা ঝড়ো হাওয়ার সময় সবাইকে নিরাপদে থাকতে হবে।
>> ঘূর্ণিঝড় বাংলাদেশের স্থলভাগ পার হওয়ার সময় চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, লক্ষীপুর, ফেনী, চাঁদপুর, বরগুনা, পটুয়াখালী, বরিশাল, ভোলা, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, বাগেরহাট, খুলনা, সাতক্ষীরা জেলায় ভারি থেকে অতি ভারি বর্ষণ হতে পারে।
>> অতি ভারি বর্ষণের কারণে চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের পাহাড়ি এলাকার কোথাও কোথাও ভূমিধসেরও শঙ্কা থাকে।
>> সাগর উত্তাল থাকায় বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত সব মাছ ধরার নৌকা, ট্রলার এবং সমুদ্রগামী জাহাজকে পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে হবে।
# বাংলাদেশে প্রস্তুতি
>> দেশের ১৯ জেলার ১৪৭টি উপজেলার ১৩ হাজার ৫০০ বর্গকিলোমিটার এলাকা উপকূলীয় এলাকা হিসেবে চিহ্নিত; সেখানে প্রায় ১ কোটি ৮০ লাখ মানুষের বসবাস।
>> এসব জেলায় ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কমিটির (সিপিপি) ৫৬ হাজার স্বেচ্ছাসেবককে প্রস্তুত রাখা হয়েছে। ঠিক হয়েছে, শুক্রবার সকাল থেকে তারা ঝুঁকিপূর্ণ অঞ্চলের বাসিন্দাদের নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নেবেন। সন্ধ্যার আগেই ঝুঁকিপূর্ণ এলাকার মানুষদের আশ্রয় কেন্দ্রে আনার কার্যক্রম শেষ করা হবে।  
>> উপকূলীয় ১৯ জেলায় তিন হাজার ৮৬৮টি আশ্রয় কেন্দ্র রয়েছে। বেশিরভাগ আশ্রয় কেন্দ্রই প্রস্তুত রাখা হয়েছে বলে সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।
>> ঝুঁকিপূর্ণ এলাকার বাসিন্দাদের সতর্ক করতে বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই সাগর তীরের এলাকাগুলোতে মাইকিং করা হচ্ছে। মজুদ করা হয়েছে শুকনো খাবার ও বিশুদ্ধ পানি।
>> ঘূর্ণিঝড়ের ঝুঁকিতে থাকা এলাকার কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সাপ্তাহিক ছুটি এবং অন্যান্য ছুটি বাতিল করে তাদেরকে কর্মস্থলে উপস্থিত থাকতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
>> সম্ভাব্য জরুরি স্বাস্থ্য পরিস্থিতি মোকাবেলায় সংশ্লিষ্ট জেলাগুলোর সব চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্য কর্মকর্তার ছুটি বাতিল করা হয়েছে। প্রতিটি জেলায় প্রস্তুত রাখা হয়েছে মেডিকেল টিম; খোলা হয়েছে নিয়ন্ত্রণ কক্ষ।
 # প্রভাব:
>> বিপদ সংকেত আসার পর চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙ্গরে অবস্থানরত বড় জাহাজগুলোতে পণ্য ওঠানামার কাজ বন্ধ রাখতে বলা হয়েছে।
>> বৃহস্পতিবার সকাল পর্যন্ত ২১টি জাহাজ বন্দর এলাকায় ছিল। সেগুলোকে বহির্নোঙ্গরে নিরাপদ স্থানে চলে যেতে বলার পাশাপাশি সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে সবসময় ইঞ্জিন চালু রাখতে বলা হয়েছে।
>> বৃহস্পতিবার বেলা ১১টা থেকে সারা দেশে সব ধরনের নৌযান চলাচল বন্ধ রেখেছে বিআইডব্লিউটিএ।
# ফণী: 
>> ভারত মহাসাগরে সুমাত্রার পশ্চিমে বিষুবরেখার কাছাকাছি এলাকায় লঘুচাপ গত ২৬ এপ্রিল নিম্নচাপে পরিণত হয়। এরপর তা পশ্চিম দিকে অগ্রসর হতে হতে দুই দিনের মাথায় পরিণত হয় মৌসুমের প্রথম ঘূর্ণিঝড়ে।
>> এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের সাগর তীরের আট দেশের আবহাওয়া দপ্তর ও বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থার দায়িত্বপ্রাপ্ত প্যানেলের তালিকা থেকে ক্রম অনুসারে ওই ঝড়ের নাম ঠিক হয় ফণী। এর অর্থ সাপ, নামটি প্রস্তাব করেছিল বাংলাদেশ।
>> অস্থির গতিপথ ধরে অত্যন্ত ধীর গতিতে এগোতে থাকা এ ঘূর্ণিঝড় দ্রুত শক্তি সঞ্চয় করতে থাকে। ২৯ এপ্রিল ফণী পরিণত হয় প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে। এরপরদিনই ভারতীয় আবহাওয়াবিদরা একে চিহ্নিত করেন অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় হিসেবে।

No comments:

Post a Comment