May 3, 2019

ফণী ঢুকেছে বাংলাদেশে

০৪/০৫/১৯/১১;৩০
bdnews24
ঘূর্ণিঝড় ফণীর প্রভাবে শুক্রবার সারা দিন ঢাকায় থেমে থেমে বৃষ্টি হওয়ায় ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে অনেককে। ছবিটি সোহরাওয়ার্দী উদ্যান থেকে তোলা। ছবি: আব্দুল্লাহ আল মমীন

ঘূর্ণিঝড় ফণী ভারতের ওড়িশা উপকূলে আঘাত হানার পর পশ্চিমবঙ্গ পেরিয়ে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল দিয়ে বাংলাদেশে ঢুকেছে বলে জানিয়েছে আহাওয়া অধিদপ্তর।



শনিবার সকাল ৬টায় ঘূর্ণিঝড়টি সাতক্ষীরা, যশোর ও খুলনা অঞ্চলে অবস্থান করছিল বলে অধিদপ্তরের এক বিশেষ বুলেটিনে বলা হয়। তবে অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড়টি দুর্বল হয়ে এখন ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিয়েছে।
এখন ঘূর্ণিঝড়টির কেন্দ্রে বাতাসের একটানা গতিবেগ ঘণ্টায় ৬২ কিলোমিটারের মতো, যা দমকা ও ঝড়ো হাওয়ার আকারে ৮৮ কিলোমিটার পর্যন্ত বাড়ছে।
শুক্রবার ওড়িষা উপকূলে আঘাত হানার সময় ঘূর্ণিঝড়ের কেন্দ্রে বাতাসের গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ১৭৫ থেকে ১৮৫ কিলোমিটার, যা দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়ার আকারে ১৯৫ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছিল। এরপর বৃষ্টি ঝরিয়ে ক্রমশ দুর্বল হতে থাকে এটি।
আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, বাংলাদেশে ঢোকার পর ফণী আরও উত্তরে অগ্রসর হচ্ছে। এর প্রভাবে ওই এলাকার আকাশ মেঘলা রয়েছে এবং বইছে ঝড়ো হাওয়া।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের পরিচালক শামসুদ্দিন আহমেদ ঝড়টি দুর্বল হওয়ার দিকটি দেখিয়ে সকাল ১০টায় সাংবাদিকদের বলেন, আশঙ্কা অনেকটাই কেটে গেছে।
তিনি বলেন, ঝড়টি মধ্যাঞ্চলের দিকে অগ্রসর হচ্ছে, ওই সব জায়গায় বজ্রবৃষ্টি, ভারি বর্ষণ হবে।
রাজশাহী, রংপুর, ঢাকা, ময়মনসিংহের পাশাপাশি সিলেট অঞ্চলেও বৃষ্টিপাতের আভাস দেন শামসুদ্দিন।
ফণীর প্রভাবে উপকূলে জোয়ারের পাশাপাশি ঝড়ো হাওয়া বইছে। শনিবার ভোররাতে নোয়াখালীর সুবর্ণচরে শতাধিক ঘর বিধ্বস্ত হয়েছে, নিহত হয়েছে একটি শিশু।
ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবাধীন এলাকার ১২ লাখ মানুষকে ইতোমধ্যে আশ্রয় কেন্দ্রে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। ঝড় মোকাবেলার যাবতীয় প্রস্তুতি সেরে রেখেছে সরকার।
যারা আশ্রয় কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছেন, তাদের নিরাপত্তা এবং ঝড়ে কেটে যাওয়ার পর নিজ নিজ আবাসে নিরাপদে ফিরিয়ে নেওয়ার বিষয়টিতে জোর দিচ্ছেন আবহাওয়া অধিদপ্তরের পরিচালক। 
 
# সংকেত
>>ঘূর্ণিঝড়ের কারণে মোংলা ও পায়রা সমুদ্র বন্দরকে ৭ নম্বর বিপদ সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। ভোলা, বরগুনা, পটুয়াখালী, বরিশাল, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, বাগেরহাট, খুলনা, সাতক্ষীরা জেলা এবং সংলগ্ন দ্বীপ ও চরগুলোও ৭ নম্বর বিপদ সংকেতের আওতায় থাকবে।
>> চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দরকে ৬ নম্বর বিপদ সংকেত দেখাতে বলেছে আবহাওয়া অফিস। চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, ফেনী, চাঁদপুর এবং নিকটবর্তী দ্বীপ ও চরগুলোও ৬ নম্বর বিপদ সংকেতের আওতায় থাকবে।
>> কক্সবাজার সমুদ্র বন্দরকে আগের মতই ৪ নম্বর স্থানীয় হুঁশিয়ারি সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে।
# সতর্কতা
>> আবহাওয়া অফিস বলছে, ঘূর্ণিঝড় ও অমাবস্যার প্রভাবে উপকূলীয় জেলা চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, ফেনী, চাঁদপুর, বরগুনা, ভোলা, পটুয়াখালী, বরিশাল, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, বাগেরহাট, খুলনা, সাতক্ষীরা এবং অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরাঞ্চল স্বাভাবিকের চেয়ে ২ থেকে ৪ ফুট বেশি উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হতে পারে।
>> ফণীর প্রভাবে ভারতের অন্ধ্র ও ওড়িশা উপকূলে প্রবল বৃষ্টি হয়েছে, সেই সঙ্গে ঘূর্ণিবাতাসের তাণ্ডব। বাংলাদেশের দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলে ঝড়ের অগ্রবর্তী অংশের প্রভাব পড়েছে সকালের দিকেই। রাজধানী ঢাকাসহ কোথাও কোথাও বৃষ্টিও হয়েছে।
>> আবহাওয়া অফিস বলছে, আগামী ২৪ ঘণ্টায় ঢাকা, ময়মনসিংহ, রাজশাহী, রংপুর,খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের অধিকাংশ জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা/হাওয়াসহ বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ হতে পারে। সেই সঙ্গে কোথাও কোথাও মাঝারী ধরনের ভারী থেকে অতিভারী বর্ষণ হতে পারে।
>> বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র জানিয়েছে, ঘূর্ণিঝড় ফণীর প্রভাবে বাংলাদেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চল, উত্তরাঞ্চল এবং তৎসংলগ্ন ভারতীয় অঞ্চলে আগামী ৭২ ঘণ্টায় ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টিপাত হতে পারে। এর প্রভাবে ব্রহ্মপুত্র, যমুনা, সুরমা, কুশিয়ারা, কংস, যাদুকাটা, তিস্তা নদীর পানির পৃষ্ঠ আগামী ৪৮ ঘণ্টায় দ্রুত বৃদ্ধি পেতে পারে। কোথাও কোথাও বিপদসীমা অতিক্রম করে আকস্মিক বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে।
>> সাগর উত্তাল থাকায় বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত সব মাছ ধরার নৌকা, ট্রলার এবং সমুদ্রগামী জাহাজকে পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে বলেছে আবহাওয়া অফিস।
# ফণী:
>> ভারত মহাসাগরে সুমাত্রার পশ্চিমে বিষুবরেখার কাছাকাছি এলাকায় লঘুচাপ গত ২৬ এপ্রিল নিম্নচাপে পরিণত হয়। এরপর তা পশ্চিম দিকে অগ্রসর হতে হতে দুই দিনের মাথায় পরিণত হয় মৌসুমের প্রথম ঘূর্ণিঝড়ে।
>> এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের সাগর তীরের আট দেশের আবহাওয়া দপ্তর ও বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থার দায়িত্বপ্রাপ্ত প্যানেলের তালিকা থেকে ক্রম অনুসারে ওই ঝড়ের নাম ঠিক হয় ফণী। এর অর্থ সাপ, নামটি প্রস্তাব করেছিল বাংলাদেশ।
>> অস্থির গতিপথ ধরে অত্যন্ত ধীর গতিতে এগোতে থাকা এ ঘূর্ণিঝড় দ্রুত শক্তি সঞ্চয় করতে থাকে। ২৯ এপ্রিল ফণী পরিণত হয় প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে। এরপরদিনই ভারতীয় আবহাওয়াবিদরা একে চিহ্নিত করেন অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় হিসেবে।  
>> ১৯৯৯ সালের ওড়িশার পারাদ্বীপে সুপার সাইক্লোনের পর ঘূর্ণিঝড় ফণীই বাতাসের শক্তির দিক দিয়ে সবচেয়ে বিপদজনক ঝড় ছিল। তিন দশক আগে ওড়িশায় ওই সাইক্লোনে প্রাণ গিয়েছিল প্রায় ১০ হাজার মানুষের।

No comments:

Post a Comment