Apr 30, 2019

বিজিএমইএ ভবনের দর উঠেছে এক কোটি ৭০ লাখ

০১/০৫/১৯/১২;১৯
bdnews24

হাতিরঝিলের বুকে অবৈধ বিজিএমইএ ভবন ভাঙার পাশাপাশি ব্যবহারযোগ্য মালামাল কেনার জন্য যে দরপত্র রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ ডেকেছিল, তাতে সর্বোচ্চ দর উঠেছে এক কোটি ৭০ লাখ টাকা।

তবে আগ্রহী যে পাঁচ প্রতিষ্ঠান দরপ্রস্তাব জমা দিয়েছে, তাদের মধ্যে ডিনামাইট ব্যবহার করে ভবন ভাঙার অভিজ্ঞতা কারও নেই।
ফলে এখন ডিনামাইট ব্যবহার না করে সনাতনী দেশীয় পদ্ধতিতেই (ম্যানুয়ালি) ভবনটি ভাঙার চেষ্টা করা হবে বলে জানিয়েছেন রাজউকের প্রধান প্রকৌশলী (প্রকল্প বাস্তবায়ন) ও হাতিরঝিল প্রকল্পের পরিচালক এ এস এম রায়হানুল ফেরদৌস।
নিলাম মূল্যায়ন কমিটি দরপত্রগুলো যাচাই বাছাই করছে জানিয়ে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেছেন, “যাচাই বাছাই শেষে আগামী সপ্তাহে বিজিএমইএ ভবন ভাঙার জন্য কার্যাদেশ দেওয়া হবে। কার্যাদেশ পাওয়ার তিন মাসের মধ্যে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানকে পুরো ভবনটি ভাঙতে হবে।”
যে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান কাজটি পাবে ভবন ভাঙার জন্য আলাদা কোনো অর্থ তারা পাবে না। দুটি বেইজমেন্টসহ ১৫ তলা বিজিএমইএ ভবন ভাঙার পর ব্যবহারযোগ্য মালামাল বিক্রি করে তারা তাদের খরচ ও লাভ উঠিয়ে নেবে।
গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের অনুমতি না নিয়ে এবং উন্মুক্ত স্থান ও প্রাকৃতিক জলাধার সংরক্ষণ আইন-২০০০ ভঙ্গ করে বেগুনবাড়ি খালের একাংশ ভরাট করে গড়ে তোলা হয় বিজিএমইএ ভবন। ২০০৬ সালে সেই নির্মাণ কাজ শেষ হয়।
রাজউক এক দিন আগে সবাইকে বের করে সিলগালা করে দেওয়ার পর হাতিরঝিলের বিজিএমইএ ভবনের মূল ফটকে এখন রয়েছে পুলিশের পাহারা। ছবি: আব্দুল্লাহ আল মমীন
জলাশয়ের উপর আড়াআড়িভাবে গড়ে ওঠা এই ভবনকে হাতিরঝিলের প্রকল্পের ‘ক্যান্সার’ আখ্যায়িত করে হাই কোর্ট ২০১১ সালে এক রায়ে ইমারতটি ভেঙে ফেলার নির্দেশ দেয়। পরে আপিল বিভাগেও তা বহাল থাকে।
সর্বোচ্চ আদালত বিজিএমইএ ভবন ভাঙার রায় দেওয়ার পর কয়েক দফায় সময় নিয়েছিলেন তৈরি পোশাক রপ্তানিকারকরা। সবশেষ আদালতের দেওয়া সাত মাস সময়সীমা গত ১২ এপ্রিল শেষ হয়।
এরপর ১৫ এপ্রিল বিজিএমইএ ভবনের মালামাল সরিয়ে নিতে একদিন সময় বেঁধে দেয় রাজউক। পরে সময় বাড়ানো হয় আরও একদিন। ভবনে থাকা ১৯টি প্রতিষ্ঠান তাদের মালামাল সরিয়ে নিলে বিজিএমএইএ ভবন বন্ধ করে তালা ঝুলিয়ে দেয় রাজউক।
এরই মধ্যে ভবনটি ভাঙার এবং ব্যবহারযোগ্য মালামাল কিনতে আগ্রহী ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে দরপত্র আহ্বান করে বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়। আগ্রহীদের ২৪ এপ্রিল বিকাল ৪টার মধ্যে রাজউক চেয়ারম্যান বরাবর আবেদন করতে বলা হয়।
তিন মাসের মধ্যে ভবন ভাঙার শর্ত দিয়ে ওই বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, আগ্রহী ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে বহুতল ভবন ভাঙার অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। ভাঙার ব্যাপারে ক্রেতাকে সর্বোচ্চ সতর্কতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করতে হবে।
যারা ভবনটি ভেঙে ব্যবহারযোগ্য মালামাল কেনার জন্য সর্বোচ্চ দর প্রস্তাব করবেন তাদের প্রস্তাবই গ্রহণ করা হবে বলে রাজউকের বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়।


রাজউকের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ওই বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পর পাঁচটি প্রতিষ্ঠান দরপ্রস্তাব জমা দেয়।
এর মধ্যে মেসার্স সালাম অ্যান্ড ব্রাদার্স এক কোটি ৭০ লাখ টাকা, পিএনএস এন্টারপ্রাইজ ৫৯ লাখ ৫০ হাজার টাকা, মেসার্স চন্দ্রপুরী এন্টারপ্রাইজ এক কোটি টাকা, ফোর স্টার এক কোটি ৫৫ লাখ ৭০ হাজার টাকা এবং মেসার্স সামিরা এন্টারপ্রাইজ ৩০ লাখ টাকা দর প্রস্তাব করে।
গৃহায়ন ও গণপূর্তমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম গত ১৭ এপ্রিল সাংবাদিকদের বলেছিলেন, বিজিএমইএ ভবন ভাঙা হবে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে। ‘উপযুক্ত’ দেশীয় প্রতিষ্ঠান না পেলে বিদেশি ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানকেই ভবনটি ভাঙার দায়িত্ব দেওয়া হবে।
হাতিরঝিলের বিজিএমইএ ভবন এখন সিলগালা; মূল ফটকে ঝুলছে রাজউকের তালা। ছবি: আব্দুল্লাহ আল মমীন
সে সময় রাজউকের পক্ষ থেকেও ভবনটি ভাঙার জন্য ডিনামাইট ব্যবহার করার সম্ভাবনার কথা বলা হয়েছিল।
তবে তা হচ্ছে না জানিয়ে এ এস এম রায়হানুল ফেরদৌস বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “যারা দরপত্র জমা দিয়েছে তারা বহুতল ভবন ভাঙার কাজে অভিজ্ঞ। কিন্তু ডিনামাইট দিয়ে ভবন ভাঙার অভিজ্ঞতা বাংলাদেশের কোনো প্রতিষ্ঠানের নেই। এজন্য এখন এটা সনাতন পদ্ধতিতে ভাঙার চেষ্টা করব।”
২০১৬ সালের ৮ নভেম্বর বিজিএমইএ ভবন নিজস্ব খরচে ভাঙতে তৈরি পোশাক রপ্তানিকারকদের এই সংগঠনকে নির্দেশ দিয়েছিল উচ্চ আদালত।
বিজিএমইএ তা না করলে রায়ের কপি হাতে পাওয়ার ৯০ দিনের মধ্যে এই নির্দেশনা বাস্তবায়ন করার নির্দেশনা ছিল রাজউকের প্রতি। সেক্ষেত্রেও রাজউক ভবন ভাঙার টাকা বিজিএমইএর কাছ থেকে আদায় করবে বলে আদেশ দিয়েছিল আদালত।
তবে রাজউক এমনভাবে পরিকল্পনা সাজিয়েছে, যাতে ভবন ভাঙার জন্য বাড়তি কোনো টাকার প্রয়োজন না হয়।
রায়হানুল ফেরদৌস এর আগে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেছিলেন, বিজিএমইএ ভবন ভাঙতে দুই কোটি টাকার মত লাগতে পারে বলে তারা হিসাব করে দেখেছেন। ভবনের ব্যবহারযোগ্য মালামাল বিক্রি করে ওই টাকা উঠে যাওয়ার কথা।

No comments:

Post a Comment