Apr 26, 2019

আ. লীগে সুবিধাভোগী কে, তালিকা চাইলেন শেখ হাসিনা


আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেছেন, দলে তিনি সেভাবে কোনো ‘সুবিধাভোগী বা অনুপ্রবেশকারী’ দেখছেন না।

শুক্রবার গণভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে একজন সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এমন মন্তব্য আসে। অনুপ্রবেশকারী কেউ থেকে থাকলে, কেউ দুর্নীতি করে থাকলে তাদের তালিকা দিতে বলেন তিনি।  
প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে ওই সাংবাদিক বলেছিলেন, “আওয়ামী লীগের অনেক সিনিয়র নেতা বলছেন, দলে যারা সুবিধাভোগী, হাইব্রিড বা অনুপ্রবেশকারী, তাদের বিরুদ্ধে এই কাউন্সিলে শুদ্ধি অভিযান চালানো হবে। সরকারের একশ দিন অতিবাহিত হল। আপনি আপনার সরকারের যে দুর্নীতিবিরোধী কর্মকাণ্ড, সে ব্যাপারে কতটুকু সন্তুষ্ট বা আপনার কোনো পর্যবেক্ষণ আছে কি না।”
উত্তর দিতে গিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, “আপনি বলছেন, আমাদের কোনো কোনো নেতা সুবিধাভোগী বা অনুপ্রবেশকারী। আমি যদি আপনাকে অনুরোধ করি, আপনি যদি একটা তালিকা আমাকে দিতে পারেন তাহলে খুব ভাল হয় যে কারা সুবিধাভোগী আর কারা অনুপ্রবেশকারী।
সরকারের মন্ত্রিসভার সদস্য আর আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ নেতাদের সামনে রেখে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আমি কিন্তু ওই ধরনের খুব একটা সুবিধাভোগী বা অনুপ্রবেশকারী এখনো দেখিনি।”
প্রশ্নকর্তা সাংবাদিককে তিনি বলেন, “এই যে আওয়ামী লীগের অনুপ্রবেশকারী, আওয়ামী লীগের অমুক তমুক… বের করেন কয়টা অনুপ্রবেশকারী আছেন আর কারা আছেন। কাদেরকে অনুপ্রবেশকারী বলবেন? এই যে যারা বসে আছেন একজনও অনুপ্রবেশকারী? প্রত্যেকেই কিন্তু জেল-জুলুম, মামলা মোকদ্দমা, এটা সেটা খেয়ে তারপর কিন্তু রাজনীতি করে আসছেন।
“হ্যাঁ, আওয়ামী লীগ মার খাবে, অত্যাচারিত হবে, নিযাতিত হবে… তো আওয়ামী লীগ কি সারাজীবন এটাই পেয়ে যাবে। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী- তাদের কি ভাল থাকার অধিকার নাই?”
বাংলাদেশকে স্বাধীন করা এবং ভাষার অধিকার প্রতিষ্ঠায় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের ত্যাগ স্বীকারের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, “২০০৮ এর আগে বাংলাদেশ কোথায় ছিল? আর এখন কোথায় আছে? আপনারা তুলনা করে দেখেন। আওয়ামী লীগই একমাত্র দল যার একটা গঠনতন্ত্র আছে এবং গঠনতন্ত্র মোতাবেক চলে।”
বিএনপির দিকে ইঙ্গিত করে শেখ হাসিনা বলেন, “অবৈধ ক্ষমতা দখলকারীদের দ্বারা যে দল গঠন হয় সে দল কেবল ক্ষমতায় থাকলেই টিকে থাকতে পারে। ক্ষমতার বাইরে থাকলে তারা থাকতে পারে না। কারণ তাদের শিকড়ে জোর নাই। তাদের শিকড়ই নাই। তাদের অবস্থা যদি নাজুক হয়, তার দায়-দায়িত্ব কার? যারা নেতৃত্ব দিচ্ছেন তাদের।
“কিন্তু আওয়ামী লীগ তো তা নয়। আওয়ামী লীগ পোড় খাওয়া রাজনৈতিক দল। অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করে বিরোধীদলে থেকে এই আওয়ামী লীগের সৃষ্টি। মানুষের অধিকার আদায়ের জন্য সংগ্রাম করে গেছে, আর ত্যাগ স্বীকার করে গেছে। আর যখন ক্ষমতায় এসেছে তখন দেশের মানুষ সুখের মুখ দেখতে শুরু করেছে।”
দুর্নীতির প্রশ্নে তিনি বলেন, “ঠিক আছে ১০০ দিন হয়ে গেছে। কার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ আছে আর কি আছে। অভিযোগটা সুনির্দিষ্ট করেন। ব্যবস্থা নেব। ফাঁকা কথা বললে আর অপবাদ দিলেতো আমি মেনে নেব না।
“কারণ আমার একটা বিবেচনা আছে দল সম্পর্কে, দলের মানুষ সম্পর্কে। আমিতো নতুন না। আমি স্কুল জীবন থেকে রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত, এটা ভুললে চলবে না। অনেকে বলে পাকের ঘর থেকে রাজনীতিতে… আমি স্কুল জীবন থেকে রাস্তায় মিছিল করে তারপর কিন্তু রাজনীতিতে এসেছি। কলেজ, ইউনিভার্সিটি সবসময় রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলাম।”
আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, “আমার ৭২ বছর বয়সে বলতে পারি, অন্তত ৬০ বছর রাজনীতি চোখে দেখছি। আর দুর্নীতির বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত আছে, থাকবে। কে ধরা পড়ে না পড়ে সেটাও খেয়াল রাখেন।”
এর আগে বিভিন্ন সময়ে শেখ হাসিনা ইংগিত দিয়েছেন, আগামীতে তিনি নতুনদের হাতে নেতৃত্ব দিয়ে অবসরে যেতে চান। সে প্রসঙ্গ টেনে একজন সাংবদিক তার কাছে জানতে চান, নেতৃত্ব নেওয়ার মত তৈরী কাওকে তিনি দেখছেন কি না।
উত্তরে তিনি বলেন, “অবসরতো নিতেই হবে, অবশ্যই। এখানে কে নেতৃত্বে আসবে দল ঠিক করবে, এটাতো আমি ঠিক করব না। আওয়ামী লীগ রাজনৈতিক দল হিসেবে তারা তাদের নেতা বেছে নেবে। সেখানে আমি কি বলে যাব অমুক হবে, তমুক হবে? আমি সেটা করব না। করিও না।”

No comments:

Post a Comment